সকালে উঠে খালি পেটে কোন কোন খাবার বা পানীয় সেবন করা সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর?
সকালে উঠে হালকা নাশতা ছেড়ে দিন শুরু করা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মোটেও পেট ভরে খাওয়া ঠিক নয়। দীর্ঘ বিশ্রাম বা সারা রাত একটানা ঘুমের পর, আমাদের শরীর জাগতে কিছুটা সময় নেয়। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, দিনের শুরুতে হালকা গরম পানি ও হালকা নাশতা দিয়ে শুরু করা উচিত। এতে শরীরের বিপাক-প্রক্রিয়া ঠিক থাকে। তাই দিনের প্রথম খাবার বা নাশতার আগে স্বাস্থ্যকর কিছু খাবার দিয়ে সকালটা শুরু করতে পারেন।
পুষ্টিবিদ রুপালি দত্ত বলেন, সকালের শুরুতে সঠিক খাবার বেছে নিয়ে খাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকালে ঘুম থেকে জাগার দু'ঘণ্টা পর নাশতা খাওয়া উচিত। তবে তার আগে কিছু খাবার বা পানীয় খেতে পারেন। আসুন দেখে নিই সেই তালিকা:
মধু
মধুর সঙ্গে হালকা গরম পানি :
দৈনিক
মধু পান আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে । বিশেষ করে সকালে খালি পেটে হালকা
গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খেলে তা ওজন কমায়, যকৃৎ পরিষ্কার রাখে ও
শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ায়। প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন ও
এনজাইম থাকায় বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে এক
চামচ মধু খেলে ঠান্ডা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়। দৈনিক এক গ্লাস
করে মধু-পানি পান করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর হয়ে যায়। মধুর
অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ পাকস্থলীর মিউকাসের নিঃসরণ ঘটায়, যা জ্বালাপোড়া মুক্ত
করে।
ভেজানো কাঠবাদাম
ভেজানো কাঠবাদাম :
কাঠবাদাম
ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কাঠবাদামের পুষ্টিগুণ বেড়ে
যায়। দীর্ঘসময় ধরে না খেয়ে থাকার পর ৫-১০টি কাঠবাদাম খাওয়া যেতে পারে। এটি
পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি সারা দিনের খাবারে রুচি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে,
কাঠবাদামের বাদামি আবরণে ট্যানিন নামের উপাদান থাকে, যা পুষ্টি শোষণ করে।
কাঠবাদাম ভিজিয়ে রাখলে খোসা সহজে খুলে যায় এবং সহজে পুষ্টি বের হয়।
আমলকীর জুস
আমলকীর জুস
সকালে
খালি পেটে আমলকীর জুস খাওয়া যেতে পারে। জুস খাওয়ার পর ৪৫ মিনিট পর্যন্ত
কফি বা চা পান থেকে বিরত থাকুন । আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমলকী ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। আমলকীর রস যকৃৎ, পেটের
পীড়া, অজীর্ণ, হজমি ও কাশিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকীতে থাকা
ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দিকাশি ঠেকাতে পারে। প্রতিদিন
খালি পেটে এই জুস খেলে হজম ভালো হয়, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
পেঁপে
পেঁপে :
প্রতিদিন
সকালে খালি পেটে পেঁপে খাওয়া যায়। পেঁপে খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং
অন্ত্রের নড়াচড়া বাড়ে। পেঁপে খাওয়ার পর এক ঘণ্টা কিছু না খাওয়া ভালো। শরীরে
বাজে কোলস্টেরলের প্রভাব কমাতে, ওজন কমাতে ও ত্বক পরিষ্কার রাখতে আমলকীর
গুণ অপরিসীম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর নানা উপকারী উপাদান থাকায় স্বাস্থ্যের
পাশাপাশি চুল আর ত্বকের জন্যও উপকারী। পেঁপের প্রচুর পরিমাণ আঁশ, ভিটামিন
সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানগুলো রক্তনালিতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল জমতে দেয়
না। তাই হৃৎস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং উচ্চরক্তচাপ এড়াতে, মেদ ঝরাতে যাঁরা
তৎপর, তাঁদের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখতে পারেন। নিয়মিত পেঁপে খেলে সাধারণ
রোগবালাই দূরেই থাকে। কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে এটি খুবই
উপকারী।
তরমুজ
তরমুজ :
খালি
পেটে খাওয়ার উপযোগী খাদ্য তালিকায় তরমুজও খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্যালরি
কম, কিন্তু ইলেকট্রোলাইটস পরিমাণ বেশি। প্রতিদিন দুই কাপের মতো তরমুজ খেলে
শরীরে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সির চাহিদা মেটে। এতে থাকা পটাশিয়াম শরীরে
ফ্লুইড ও মিনারেলসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া
অ্যাজমার মতো রোগ এবং ব্যথা উপশমে তরমুজ উপকারী। তরমুজের থাকা বিশেষ কয়েক
ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড ক্রমাগত নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তের
স্বাভাবিক কার্যপ্রণালি বজায় রাখে।
খেজুর
খেজুর :
শরীরে
দ্রুত শক্তি জোগাতে পারে খেজুরের উপকারিতা অনন্য। দিনের শুরুটা খেজুর দিয়ে
উপভোগ করতে পারেন। খেজুরে প্রচুর দ্রবণীয় আঁশ থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ার
জন্য ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের সমস্যা দূর করতে পারে খেজুর। খেজুর
হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রক্তপ্রবাহে গতি সঞ্চার করে। অল্প কয়েকটা
খেজুর খেলে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যায়। এই ফল পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে
উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে, শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়। ফলে
মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা
হাড়কে মজবুত করে। শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে।
No comments